বিস্তারিত পড়ুন»»
কিন্তু সাজেক ভ্যালি ভ্রমণে যাওয়ার আগে অনেক কিছুই জানা প্রয়োজন। কখন যাবেন? কোথায় থাকবেন? কীভাবে যাবেন? কোন কোন জায়গা ঘুরে দেখবেন? এসব প্রশ্নের উত্তর না জেনে গেলে আপনার ভ্রমণ অসম্পূর্ণ থেকে যেতে পারে।
চলুন তাহলে জেনে নেই সাজেক ভ্যালি ভ্রমণের সম্পূর্ণ গাইডলাইন - এর ভৌগোলিক অবস্থান থেকে শুরু করে যাতায়াত, আবাসন, দর্শনীয় স্থান, ভ্রমণের সেরা সময় এবং প্রয়োজনীয় টিপস সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য।
সাজেকের ভৌগোলিক অবস্থানঃ
সাজেক ভ্যালি বাংলাদেশের খাগড়াছড়ি জেলার বাঘাইছড়ি উপজেলায় অবস্থিত। এটি বাংলাদেশের সর্বোচ্চ পর্যটন কেন্দ্রগুলোর মধ্যে অন্যতম। খাগড়াছড়ি শহর থেকে প্রায় ৭০ কিলোমিটার দূরে এই মনোরম পাহাড়ি এলাকাটি অবস্থিত।
সাজেক ভ্যালির চারপাশে রয়েছে, উত্তরে মিজোরাম সীমান্ত, দক্ষিণে বাঘাইছড়ি উপজেলা সদর, পূর্বে খাগড়াছড়ি জেলা, পশ্চিমে লংগদু উপজেলা।
সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে উচ্চতা সাজেক ভ্যালির সর্বোচ্চ উচ্চতা ২০০০ ফুট ও গড় উচ্চতা ১৮০০ ফুট।
এই উচ্চতার কারণে সাজেক ভ্যালিতে সারাবছর মেঘের লীলাখেলা দেখা যায়। বিশেষ করে সকাল বেলায় পুরো ভ্যালি মেঘে ঢেকে যায়, যা এর সৌন্দর্যকে আরও বহুগুণ বাড়িয়ে দেয়। এখন আমরা দেখব কীভাবে এই অপরূপ সুন্দর স্থানে যাতায়াত করা যায়।
হ্যাপি ট্রাভেলার্স HTG গ্রুপের সাথে অল্প খরচে সাজেক ভ্রমণ প্যাকেজ
যাতায়াত ব্যবস্থাঃ
ঢাকা থেকে সাজেক যাওয়ার সহজ উপায় বাসে করে খাগড়াছড়ি যাওয়া। বাস সার্ভিস রয়েছে হানিফ, শ্যামলী, শান্তি পরিবহন, ইউনিক সহ বিভিন্ন পরিবহন সেবা। এর মাঝে কিছু বাস দীঘিনালা পর্যন্ত যায়। সারাদিনেই বাস ঢাকা থেকে কিছু সময় পর পর বাস ছাড়ে ভাড়া ৮৫০-১২০০ টাকা।
খাগড়াছড়ি বা দীঘিনালা থেকে সাজেকে চাঁদের গাড়ি বা সিএনজি বা মোটরসাইকেল দিয়ে যেতে হয়, সময় লাগে প্রায় ২ ঘণ্টা। চাঁদের গাড়ি সবুজ রঙের ৭০০০ থেকে ৭৫০০ টাকা আর সাদা রঙের ৮০০০ থেকে ৯০০০ টাকা।
বাঘাইছড়ি আর্মি ক্যম্প থেকে প্রতিদিন সকাল ও বিকাল দুইটি ইস্কট ছাড়ে। সকালে প্রায় দশটা হতে সাড়েদশ টাই এবং বিকাল প্রায় পাঁচ টার দিক ইস্কট ছাড়ে। সাজেক যেতে আপনাকে এই সময় টা মনে রাখতে হবে।
থাকার ব্যবস্থাঃ
সাজেক ভ্যালিতে প্রকৃতির কোলে রাত্রিযাপনের জন্য অনেক মানসম্মত রিসোর্ট রয়েছে। সিজন ও সময়ের উপর রিসোর্টগুলোর ভিন্ন প্রাইজ হয়। যেমন ২০০০-৬০০০ টাকা। কিছু উলেক্ষ যোগ্য রিসোর্ট হলঃ মেঘ পুঞ্জ রিসোর্ট, রুপসি সাজেক রিসোর্ট, কংলক হিল রিসোর্ট, আবকাশ রিসোর্ট, দার্জিলিং রিসোর্ট,মেঘালয় রিসোর্ট, সাজেক রিসোর্ট এন্ড কটেজ, তারেং রিসোর্ট, মেঘ মাচাং রিসোর্ট, মেঘপল্লী রিসোর্ট, লুসাই কটেজ, আদ্রিকা ইকো কটেজ, রুন্ময় রিসোর্ট, আলো রিসোর্ট, জুমঘর রিসোর্ট ইত্যাদি।
হ্যাপি ট্রাভেলার্স HTG গ্রুপের সাথে অল্প খরচে সাজেক ভ্রমণ প্যাকেজ
সাজেক ভ্যালির দর্শনীয় স্থানসমূহঃ
কংলাক পাহাড়ঃ কংলাক পাহাড় সাজেক ভ্যালির সর্বোচ্চ পয়েন্ট। এখান থেকে পুরো সাজেক এলাকার পানোরামিক দৃশ্য দেখা যায়। পাহাড়ের চূড়ায় উঠতে প্রায় ৩০-৪০ সময় লাগে।
লুসাই গ্রামঃ লুসাই ও ত্রিপুরা জনগোষ্ঠীর ঐতিহ্যবাহীর জন্য সাজেকে লুসাই গ্রাম অনেক সুন্দর ও সজ্জিত। লুসাই গ্রাম অনেক পরিষ্কার গ্রাম। লুসাই গ্রামে আদিবাসী পোশাক ভাড়া পাওয়া যায়। এখানে আদিবাসীদের জীবন ধারা সম্পর্কে জানতে পারবেন।
হ্যালিপেডঃ হ্যালিপেড হল সেনাবাহিনীর হেলিকাপটার ওঠা নামার স্থান। কিন্তু এখানে খুব সকালে ও সন্ধায় বসে আড্ডা দেওয়া আর পাহাড়ের সাথে মেঘের খেলা উপভোগ করা যায়।
স্টোন গার্ডেনঃ পাথরে সজ্জিত স্টোন গার্ডেন। পাথরের উপর বসে আপনি পাহাড় ও মেঘের এক অপরূপ দৃশ দেখতে পারবেন।
সাজেক ভ্যালিঃ মেঘের সাগরে হাঁটার অভিজ্ঞতা পাওয়া যায় সাজেক ভ্যালিতে। সকাল ৬টা থেকে ৯টার মধ্যে সর্বোত্তম দৃশ্য দেখা যায়। বর্ষা মৌসুমে এই দৃশ্য আরও মনোরম হয়।
সাজেক ভ্রমণে সময়ঃ সাজেক ভ্যালিতে ভ্রমণের জন্য বছরের বিভিন্ন সময় বিভিন্ন অভিজ্ঞতা প্রদান করে।
শীত (নভেম্বর-জানুয়ারি) পরিষ্কার আকাশ, সুন্দর সূর্যোদয় দেখা যায়। কিন্তু এই সময় অতিরিক্ত ঠাণ্ডা থাকে।
বর্ষা (জুন-সেপ্টেম্বর) সবুজ প্রকৃতি, মেঘের খেলা কিন্তু এই সময় পিছলা রাস্তা, ল্যান্ডস্লাইডের ঝুঁকি থাকে। বর্ষাকালে সাজেক একেবারে ভিন্ন রূপ ধারণ করে। এই সময় মেঘের সাগরে ভাসমান পাহাড়শ্রেণী, ঘন সবুজ বনানী, ঝর্ণার কলতান, রেইনবো দৃশ্য দেখা যায়
শীতকাল সাজেক ভ্রমণের সর্বোত্তম সময়। এই সময়ের স্বচ্ছ আকাশে তারার আলো, কুয়াশাচ্ছন্ন সকাল, রঙিন সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত দেখা যায় এবং শীতের আমেজে ক্যাম্পফায়ার করা হয়।
খাবারঃ সাজেকের সুস্বাদু খাবার হল বেম্বু চিকেন, বেম্বু সবজি, বেম্বু বিরিয়ানি আরও পাহাড়ি অনেক ফলমূল পাওয়া যায়।
নিরাপত্তা সতর্কতাঃ
রাতে একা ভ্রমণ এড়িয়ে চলুন, স্থানীয় গাইড সাথে রাখুন, আবহাওয়ার পূর্বাভাস জেনে নিন এবং জরুরি ঔষধপত্র সাথে রাখুন।
প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রঃ
গরম কাপড় (স্যোয়েটার/জ্যাকেট) টর্চলাইট ও পাওয়ার ব্যাংক, পানি ও ড্রাই ফুড, ফার্স্ট এইড কিট, রেইন কোট/ছাতা সাথে রাখুন।
হ্যাপি ট্রাভেলার্স HTG গ্রুপের সাথে অল্প খরচে সাজেক ভ্রমণ প্যাকেজ
সাজেক ভ্যালি বাংলাদেশের অন্যতম জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে দ্রুত জনপ্রিয়তা অর্জন করছে। খাগড়াছড়ির এই মনোরম পাহাড়ি এলাকা পর্যটকদের জন্য বয়ে আনে অসাধারণ প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, আদিবাসী সংস্কৃতি এবং অ্যাডভেঞ্চারের সুযোগ। সহজলভ্য যোগাযোগ ব্যবস্থা এবং আধুনিক আবাসন সুবিধা এই ভ্রমণকে আরও আরামদায়ক করে তুলেছে।
আপনি যদি প্রকৃতির কোলে কিছু অবিস্মরণীয় মুহূর্ত কাটাতে চান, তবে সাজেক ভ্যালি হতে পারে আপনার পরবর্তী গন্তব্য। শীতকাল বা শরৎকালে ভ্রমণের পরিকল্পনা করুন, প্রয়োজনীয় সতর্কতা অবলম্বন করুন এবং নিজেকে সমর্পণ করুন পাহাড়ি প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্যে।
এখন আপনি সাজেক ভ্রমণের জন্য পুরোপুরি প্রস্তুত। মনে রাখবেন, সাজেকের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগের পাশাপাশি পরিবেশ সংরক্ষণও আমাদের দায়িত্ব।
0 মন্তব্য