বিস্তারিত পড়ুন»»
দেবতাখুম ভ্রমণের পরিকল্পনা
একদিনে দেবতাখুম ভ্রমণের জন্য যথাযথ পরিকল্পনা করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। চলুন, ধাপে ধাপে দেখে নেওয়া যাক ভ্রমণের পুরো আয়োজন।
ভ্রমণের সম্ভাব্য সময়
দেবতাখুম ভ্রমণের জন্য বর্ষাকাল (জুলাই-সেপ্টেম্বর) সবচেয়ে উত্তম, কারণ এ সময় খুমের পানি গভীর হয় এবং নৌকা চালানোর অভিজ্ঞতাও চমৎকার হয়। তবে, শীতকালে (নভেম্বর-ফেব্রুয়ারি) পানি কমে যায়, ফলে পুরো খুমের ভিন্ন রূপ দেখা যায়।
ভ্রমণের বিস্তারিত সূচি
ঢাকা থেকে বান্দরবান ভোররাতে (সাধারণত ১০:৩০ PM - ১১:৩০ PM) ঢাকা থেকে বান্দরবানের উদ্দেশ্যে বাসে রওনা হওয়া ভালো। শ্যামলী, হানিফ, এস আলম, ডায়মন্ড, দেশ ট্রাভেলস ইত্যাদি পরিবহনের নন-এসি ও এসি বাস সার্ভিস রয়েছে। ভাড়া: ৬০০-২০০০ টাকা (নির্ভর করে এসি/নন-এসি সার্ভিসের ওপর)।
বান্দরবান থেকে রুমা বাজার
ভোরে বান্দরবান পৌঁছানোর পর, রুমার উদ্দেশ্যে চান্দের গাড়ি (জীপ) বা লোকাল বাসে যেতে হবে।
• লোকাল বাসঃ জনপ্রতি ১৫০-২০০ টাকা।
• চান্দের গাড়িঃ ৮-১০ জনের দল হলে **ভাড়া ৩৫০০-৪০০০ টাকা (রিজার্ভ)।
রুমা বাজার থেকে বগালেক হয়ে দেবতাখুম
রুমা বাজার থেকে প্রথমে বগালেক যেতে হবে। এর জন্য ইঞ্জিনচালিত নৌকা অথবা চান্দের গাড়ি ব্যবহার করা যায়।
• নৌকা ভাড়াঃ জনপ্রতি ২০০-৩০০ টাকা
• চান্দের গাড়ি রিজার্ভ করলেঃ ৩০০০-৪০০০ টাকা (দলভেদে ভাগ করে নেওয়া যায়)
বগালেক থেকে হেঁটে বা চান্দের গাড়িতে শীলেরতং পাড়ায় পৌঁছানো যায়, যেখান থেকে দেবতাখুম যাত্রা শুরু হবে।
দেবতাখুম রহস্যময় জলপথের অ্যাডভেঞ্চার
দেবতাখুমের মূল আকর্ষণ হলো গভীর খুমের ভেতর দিয়ে বাঁশের ভেলা (ডিঙ্গি) বা লাইফ জ্যাকেট পরে সাঁতরানো।
• খুমের প্রস্থ বেশ সরু, দুই পাশে সুউচ্চ পাথরের দেয়াল যেন আকাশ ছুঁয়েছে।
• পানি স্বচ্ছ ও শীতল, তাই গ্রীষ্মকালেও এখানে শীতল অনুভূতি পাওয়া যায়।
• প্রায় ৪০০-৫০০ মিটার দীর্ঘ জলপথ পাড়ি দিতে হয়।
• কিছু জায়গায় পানি ১০-১৫ ফুট গভীর, তাই লাইফ জ্যাকেট বাধ্যতামূলক।
💰 ভ্রমণ খরচঃ
• লাইফ জ্যাকেট ভাড়াঃ ৫০-১০০ টাকা।
• গাইড ফিঃ ১০০০ টাকা (গ্রুপ-ভেদে ভাগ করে নেওয়া যায়)
• ভেলা (বাঁশের ভেলা) ভাড়াঃ ২০০-৩০০ টাকা।
দুপুরের খাবার ও বিশ্রাম
দেবতাখুম ঘুরে এসে রুমা বাজার বা বগালেকের কোনো স্থানীয় খাবারের দোকানে দুপুরের খাবার খাওয়া যায়। সাধারণত দেশি খাবার (ভাত, মাংস, ডাল, সবজি) পাওয়া যায়, যার খরচ জনপ্রতি ১৫০-২৫০ টাকা।
ফেরার পরিকল্পনা
• বিকেলের মধ্যে রুমা থেকে বান্দরবান ফিরে আসতে হবে।
• বান্দরবান থেকে রাতের বাস ধরে পরদিন সকালে ঢাকা পৌঁছানো সম্ভব।
সম্ভাব্য মোট খরচ (একজনের জন্য)
খরচের খাত | আনুমানিক খরচ |
---|---|
ঢাকা-বান্দরবান বাস (ডাবল ট্রিপ) | ১২০০-২০০০ টাকা |
বান্দরবান-রুমা বাজার (ডাবল ট্রিপ) | ৩০০-৫০০ টাকা |
রুমা থেকে বগালেক-দেবতাখুম (যাতায়াত) | ৫০০-১০০০ টাকা |
লাইফ জ্যাকেট ও গাইড ফি | ৩০০-৫০০ টাকা |
খাওয়া-দাওয়া (সকাল, দুপুর, রাত) | ৪০০-৬০০ টাকা |
অন্যান্য খরচ (চা, পানি, স্ন্যাকস) | ২০০-৩০০ টাকা |
মোট আনুমানিক খরচ | ২৯০০-৫০০০ টাকা (দল-ভেদে কমতে পারে) |
দেবতাখুম ভ্রমণে প্রয়োজনীয় টিপস
✅ লাইফ জ্যাকেট বাধ্যতামূলক, কারণ কিছু জায়গায় পানির গভীরতা বেশি।
✅ স্মার্টফোন বা ক্যামেরার জন্য ওয়াটারপ্রুফ ব্যাগ সঙ্গে নিন।
✅ খুব বেশি ভারী ব্যাগ বহন করবেন না, কারণ হাইকিং ও সাঁতরানো দুটোই করতে হবে।
✅ স্থানীয়দের সম্মান করুন এবং প্রকৃতির কোনো ক্ষতি করবেন না।
✅ যদি দল ছোট হয় (২-৩ জন), তবে অন্য গ্রুপের সাথে যোগ দিন খরচ বাঁচানোর জন্য।
✅ চান্দের গাড়ির দরদাম করে নিন, কারণ চালকরা প্রথমে বেশি দাম চায়।
দেবতাখুম ভ্রমণ একদিনেই করা সম্ভব, তবে একটু পরিকল্পনা করে যেতে হবে। যাদের অ্যাডভেঞ্চার ভালো লাগে, তাদের জন্য এটি দারুণ এক অভিজ্ঞতা হতে পারে। অল্প বাজেটে একদিনের মধ্যে গহীন অরণ্য, রহস্যময় জলপথ ও পাহাড়ি সৌন্দর্য উপভোগ করা যাবে। সঠিক প্রস্তুতি নিলে এটি স্মরণীয় এক ভ্রমণ হয়ে উঠবে।
আপনি কি শিগগিরই দেবতাখুম যাওয়ার পরিকল্পনা করছেন? 😊
0 মন্তব্য